নীলনগর স্টেশন। নির্জনতায় আচ্ছন্ন। রাতের ট্রেনটি ছাড়বার পর এমন নির্জন আবহই বিরাজ করে। একমাত্র চায়ের দোকানটি বন্ধ। পত্রিকা স্টলটিরও একই অবস্থা। তবে স্টলের সামনে দু’চারজন পায়চারি করছে। হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যে তারাও হারিয়ে যাবে নিঃশব্দের গহীনে। ঘুমিয়ে পড়বে স্টেশনটি। অবশ্য রাতের দৃশ্যপটের সাথে পুরোপুরি ভিন্ন সকালের দৃশ্যপট। ভোর হতে না হতেই জড়ো হতে থাকে মানুষ। টিকেটের প্রত্যাশায়। একটি মাত্র ট্রেনই ঢাকায় যায়। নীলনগর স্টেশনের সিট বরাদ্দ কম। সঙ্গত কারণেই টিকেটের চাপ থাকে বেশী। আসন বরাদ্দের নিমিত্তে দীর্ঘ আন্দোলনে নিরত নীলনগরের সচেতন জনগোষ্ঠী। কিন্তু আজ অবধি সে প্রত্যাশাটি পূরণ হয় নি তাদের।
আজ প্রায় সূর্য উঠবার সাথে সাথেই স্টেশনে এসেছে জোনাকী। দাঁড়িয়ে আছে টিকেট কাউন্টারের সামনে। ও একা নয়, সাথে আরো চারজন মহিলা। একে অপরের পরিচিত হওয়ায় অস্বস্তি লক্ষিত হচ্ছে না ওদের মাঝে। বরং কীভাবে টিকেট পাওয়া যাবে তা নিয়েই চলছে ফিস ফিস করে আলোচনা। লাইনের মাঝামাঝি অবস্থানে ওরা। ভোর ছ’টার মধ্যে এসেও এই অবস্থা। দেরিতে এলে হয়ত আরো পেছনে দাঁড়াতে হতো। দু’ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মাত্রই স্টেশন মাস্টার এসেছেন। জানালার ফাঁক দিয়ে তালের মতো গোল মুখখানি দেখা যাচ্ছে তার। চা পান করছেন আর বড় বড় চোখ দুটি দিয়ে পরখ করছেন টিকেট প্রত্যাশীদের। কম্পিউটারও অন করেছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকেট দেয়া শুরু করবেন। প্রবল আগ্রহ নিয়ে তাকেও দেখছে সবাই। পেছনের লাইনের মানুষগুলিও মাথা উঁচু করে দেখবার চেষ্টা করছে। সামনে ঈদ। তাই টিকেট প্রাপ্তি নিয়ে সবার মাঝে উৎকণ্ঠা। চায়ের দোকানটি খুলেছে। টেপ রেকর্ডারে বেজে চলেছে পুরোনো দিনের গান। দাঁড়িয়ে, বসে চা খাচ্ছে যাত্রীরা। পত্রিকা স্টলটিতে হকাররাও ব্যস্ত হয়ে উঠেছে পত্রিকা সংগ্রহে। প্ল্যাটফর্মের সামনে দাঁড়িয়ে সান্তাহার, পার্বতীপুর ও পাটগ্রামগামী যাত্রী। এখনই তিস্তা লোকাল ট্রেনটি আসবে। সবমিলিয়ে নীলনগর স্টেশনটি এই মুহূর্তে পরিগ্রহ করেছে তার সর্বোচ্চ ব্যস্ততম রূপটিকে।
ধীর গতিতে টিকেট প্রদান করছেন স্টেশন মাস্টার। দেখে মনে হচ্ছে অনেকটা ইচ্ছে করেই দেরী করছেন। এতক্ষণে বিক্রি করেছেন মাত্র দুটো টিকেট। যদিও টিকেট বিক্রি তার কাজ নয়। স্টাফ কম থাকায় তাকেই এ কাজটি করতে হচ্ছে। অবশ্য এতে যে তিনি সন্তুষ্ট তা তার চাহনিতে স্পষ্ট। জনগণের ভোগান্তি চূড়ায় উঠিয়ে অবৈধ উপার্জনের এমন অবলম্বন মন্দ কী? এমন ভাবনাই হয়ত সন্তুষ্টির কারণ। লাইনের আশপাশ জুড়ে কিছু লোক ঘোরাফেরা করছে। আবার কিছু লোক জানালা দিয়ে স্টেশন মাস্টারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে। ‘ বাইরের লোক লাইনে ঢুকবেন না, সরে যান ভাই, সরে যান।’ তাদের এমন অপচেষ্টা প্রত্যক্ষ করে লাইনের মানুষগুলি অনবরত চেঁচিয়ে যাচ্ছে। জানালার পাশে দাঁড়ানো লোকগুলি এমন ভান করছে যেন কোন কথাই শুনতে পাচ্ছে না। যে কোনোভাবে স্টেশন মাস্টারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে তারাও। এদিকে লাইন ক্রমাণয়েদীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে চলেছে।
আশা নিয়ে অবিচল দাঁড়িয়ে জোনাকী। দুটো টিকেটের প্রয়োজন ওর। একটি করে টিকেট বিক্রি হচ্ছে আর প্রত্যাশার পরিধিটি বিস্তৃত হচ্ছে ওর। বয়স পয়ত্রিশের কাছাকাছি। কাঠের মতো শুকনো শরীর। গায়ের রঙ কুচকুচে কালো। বিবর্ণ হয়ে আসা প্লাস্টিকের লাল চুরি শোভা পাচ্ছে কালো দুটি হাতে। নাক ফুলটির চেহারা দেখে মনে হচ্ছে হাজার বছরের পুরোনো। উৎকণ্ঠায় ভরা কালো মুখখানিতে শুধু দাতগুলিই ঝকঝক করছে। তবে জোড়াচোখ জুড়ে যেন অগণিত প্রশ্নের প্রতিচ্ছবি। তিস্তা লোকাল ট্রেনটি এখনই ছাড়বে। যাত্রীদের মাঝে লক্ষ করা যাচ্ছে স্বাভাবিক অস্থিরতা। কিন্তু টিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত মন্থর গতি প্রকাশ পাচ্ছে স্টেশন মাস্টারের মাঝে। এখনও একটি টিকেট দিতেই দীর্ঘ সময় নিচ্ছেন তিনি। ধীর গতিতে টিকেট প্রদানের কারণ বুঝতে পারছে না কেউ। এমন পরিস্থিতি অবলোকন করে ক্রমেই বিচলিত হয়ে উঠছে টিকেট সংগ্রহকারীরা। চিৎকার করে এভাবে টিকেট দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলছে স্টেশন মাস্টারকে। জোনাকীরাও ওদের সাথে যোগ দিচ্ছে। ‘শেষ পর্যন্ত টিকেট পাওয়া যাবে তো?’ এমন একটি আশঙ্কা সবার মাঝে সন্দেহের বীজ ছড়াচ্ছে স্টেশন মাস্টারের এমন অস্বাভাবিক আচরণে।
তাদের এই প্রতিবাদে বাধ্য হয়েই স্টেশন মাস্টার টিকেট প্রদানে একটু গতিশীল হয়েছেন। জোনাকীরাও কাউন্টারের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। আট। এক দুই করে গুনে দেখলো জোনাকী। ওর সামনে মাত্র আটজন। টিকেট পেয়ে যাবে ভেবে আশান্বিত জোনাকী। কালো মুখখানিতে ঈষৎ হাসির প্রভা যেন ঠিকরে পড়ছে অবশেষে। ওর সাথে থাকা মহিলাদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে সমঅনুভূতি। এরই মাঝে হঠাৎ করে ভদ্র পোশাক পরিহিত দুজন লোক আসলেন স্টেশনে। কোনো দিকে না তাকিয়ে সরাসরি প্রবেশ করলেন কাউন্টারের ভেতরে। তাদের দেখে হতচকিত হলেন স্টেশন মাস্টার। একেবারে হন্তদন্ত হয়ে বসতে দিয়ে পিয়নকে ডাকলেন চা আনতে। টিকেট প্রদানও বন্ধ রাখলেন। শুরু করলেন তাদের সাথে কথোপকথন। অঙ্গভঙ্গি দেখে বুঝতে পারলেন তাদের উদ্দেশ্য।
যাত্রীদের যে চাপ! কি করে এতগুলি টিকেট দিই আপনাদের, বলুন তো? হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলেন লাইনে থাকা যাত্রীদের। পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন স্টেশন মাস্টার। মানসিক দীনতার কারণে তাদের চোখের সাথে চোখ রাখতে পারলেন না তিনি। ‘পরিস্থিতি সামাল দেবার দায়িত্ব আমাদের, আপনি দ্রুত টিকেটের ব্যবস্থা করুন।’ কতকটা নির্দেশের সুরে বললেন তারা। তাদের কথায় বাধ্য হলেন স্টেশন মাস্টার। দ্রæত বেশ কয়েকটি টিকেট দিলেন তাদের। টিকেট নিয়ে মুহূর্তেই উধাও হলেন তারা। সূ² একটি খুশির রেখা স্টেশন মাস্টারের টোল পড়া গালে জেগে উঠলেও সেটিকে কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করলেন তিনি। গোপন রহস্যটি বুঝতে দিলেন না কাউকেই। ভাবখানা এমন যে, কিছুই ঘটে নি।
‘যাক বাবা, বাঁচা গেল।’ ভদ্রলোকদের অভদ্র অবস্থানের অবসান ঘটায় হাফ ছেড়ে বাঁচলো জোনাকী। লক্ষ্যের কাছাকাছি আসায় অস্বস্তি বিরাজ করলেও ঘাবড়ালো না। কপাল ও মুখখানি ভিজে গেছে ঘামে। বেগুনী রঙের পুরোনো ময়লা শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছে ফেললো সে ঘাম। বৃষ্টির মতো ঘামগুলি ঝরে পড়লো কাউন্টারের বারান্দায়। উঁচুতে ঝুলানো ফ্যানের পাখাগুলির দিকে অনায়াসেই চলে গেল ওর শ্রান্ত দুটি চোখ। কিন্তু ধীরলয়ে ঘুরতে থাকা পাখার বাতাস এসে পৌঁছলো না ওর মুখ অবধি। কতকটা যেন ধীর গতিতে বয়ে চলা ট্রেনের চাকার মতো।
আবারও টিকেট দেয়া শুরু করেছেন স্টেশন ম্স্টাার। এক এক করে টিকেট প্রদান করলেন আটজনকে। পরিস্থিতিও পূর্বের তুলনায় শান্ত। অকস্মাৎ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। সিংহের থাবার মতো কে যেন এসে চেপে ধরলো জোনাকীর হৃৎপিণ্ড। স্টেশন মাস্টারের দাঁড়ানো দেখে অনুভব করলো জোনাকী। আজকে আর টিকেট পাওয়া সম্ভব নয়। উপলব্ধি যতই গভীর হতে থাকলো ততই জোনাকীর গলা যেন সিংহের থাবায় ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হতে থাকলো। দাঁড়িয়ে আছে ও কাউন্টারের জানালার একটি রড় ধরে। ‘টিকেট শেষ’ লেখা সম্বলিত একটি সাইনবোর্ড ঝুলে রেখে জানালা বন্ধ করলেন স্টেশন মাস্টার। বন্ধ হতে থাকলো যেন জোনাকীর শ্বস-প্রশ্বাস। নিজের চোখকে বিশ্বাসকরতে পারছে না জোনাকী। এমন অভাবিত মুহূর্ত সৃষ্টি হবে কেন ওর জীবনে? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো অনবরত। ঝিমঝিম করতে থাকলো ওর শরীর। রক্তপ্রবাহও হয়ত বৃদ্ধি পেল। কী করবে, কিম্বা কী করা উচিত এই মুহূর্তে বুঝতে পারছে না ও। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজেকে প্রস্তুত করে চলেছে। এরই মাঝে গার্ড এবং কর্মচারী দরজা লাগিয়ে দিয়েছে অফিসের। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে ভেবেই এমন উদ্যোগ। লাইন ভেঙে অফিসের দরোজায় চলে এসেছে সবাই। কেউ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে, কেউ দরজায় লাথি মারছে, আবার কেউ বাইরে বের হলে দেখে নেবে, অনবরত এমন হুংকার দিয়ে চলেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাভাবিক হয়েছে জোনাকী। যেভাবেই হোক টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। একসাথে থাকা পাঁচজন মহিলার মাঝেই এমন অবিনাশী উদ্যম। অনবরত চিৎকার করে চলেছে ওরাও।
এরই মাঝে চলে এল পুলিশের ভ্যান। চেষ্টা করতে থাকলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের। অনেকই বিষয়টি অবগত করলো পুলিশকে। যে কোনো উপায়ে টিকেট প্রাপ্তির অনুরোধ করলো জোনাকীরাও। কিন্তু কারো কথাতেই কোনো কাজ হলো না। পুলিশ অফিসার সবাইকে স্টেশন ত্যাগের নির্দেশ দিলেন। শুরুতে বেগ পেতে হলেও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে এলো পরিস্থিতি। কোমরে হাত রেখেই দাঁড়িয়ে আছে জোনাকীরা। টিকেট পাওয়া যে অসম্ভব বুঝতে পারলো সবাই। কতকটা নিরুপায় হয়েই স্টেশন ছেড়ে হাঁটতে থাকলো।
ইতোমধ্যে বারোটা পেরিয়ে গেছে। মাথা উঁচু করে উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকালো জোনাকী। সূর্য ঠিক মধ্যগগনে। ‘ আগে বাড়ী আয়, গিলে ফেলবো তোকে।’ স্বামীর কর্কশ মুখখানি ভেসে উঠতেই আঁতকে উঠলো ও। উন্মুক্ত আকাশের মাঝেই খুঁজতে চাইলো কাঙ্খিত ট্রেনের টিকেট। সূর্যের প্রখর তাপে যেন ঝলসে গেল ওর মুখখানি। স্টেশনের কাছেই বাড়ী। হাঁটতে থাকলো বাড়ীর দিকে। পূর্বে কাজ করতো রেস্তোরায়। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ছেড়ে দিয়েছিল। ইদানীং স্টেশন এলাকায় ঘোরাফেরা করে বলে কেউ আর বাসার কাজেও নিতে চায় না। বাড়ীর আশপাশের লোকজনেরও সন্দেহজনক চাহনি ওর প্রতিটি মুহূর্তকে করে তোলে অসহনীয়।
‘এতক্ষণে সময় হলো নবাবজাদীর?’ বাড়ীতে প্রবেশ করতেই স্বামীর কর্কশ কণ্ঠস্বরটি কানে এলো জোনাকীর। কোনো উত্তর দিলো না ও। বাচ্চা দুটো উঠোনেই লুটোপুটি করছে খালি গায়ে। টিভিতে বাচ্চাকে হত্যা করে মায়ের আত্মহননের দৃশ্য দেখেছে জোনাকী। একবার নয়, অনেকবার। প্রভাবিতও হয়েছিল। কিন্তু সাহস কুলোয় নি। পেটে ধরা বাচ্চাদের মেরে ফেলে নিজেকে আত্মহননের। যতবারই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েছে ততবারই বিমুখ হয়েছে। নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে; যত কষ্টই হোক ওদের জন্যই বাঁচতে হবে। ওর এমন প্রতিজ্ঞাই জীবন ডায়েরির দিনগুলিকে দীর্ঘায়িত করে চলেছে। বাচ্চা দুটিকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নিলো বুকের মাঝে। অনিয়ন্ত্রিত কষ্টের মাঝেও সন্তানের হাসিমাখা মুখগুলি দেখেই ওর সকল যন্ত্রণা কোথায় যেন মিলিয়ে যায়। শুধুই অনুভব করে সন্তানদের নিয়ে অনন্তকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকবার।
‘কিরে কথা বলছি, গায়ে লাগছে না। চোখের পিচুটি মুছতে মুছতেই এগিয়ে এলো ফটকা, জোনাকীর স্বামী। কই, টিকিট কই, দে।’ হাত বাড়ালো ফটকা। তার অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, জ্যান্ত খেয়ে ফেলবে জোনাকীকে। ভগ্ন শরীর, আলুথালু চুল, ইষ্ৎ ছেড়া গেঞ্জি আর গায়ের দুর্গন্ধই প্রমাণ করে চরম দারিদ্র্যের প্রতিমূর্তি।
‘টিকিট পাই নি।’ কতকটা চাপা স্বরে বলে এক হাজার টাকার দুটি নোট স্বামীর হাতে দিল জোনাকী।
কিরে, টিকিট কোথায়? টাকা দিলি যে!‘
‘নিশ্চুপ রইলো জোনাকী।’
‘তা টিকেট পাসনি তো রেললাইনের ধারে শুতে পারিসনি মাগী।’ এই বলে জোনাকীর গালের মাঝে জোরে একটা চড় কষালো ফটকা। প্রতিবাদ করলো না জোনাকী। যে স্বামী একসময় নিজেকে উজাড় করে ওকে ভালবাসতো নেশার কবলে তারই অবস্থা যে আজ এমন হবে সেটি কি ভাবতে পেরেছিল জোনাকী! সহ্য করে দাঁড়িয়ে আছে জোনাকী। এটি দেখে সঙ্গে সঙ্গে চুলের মুঠি ধরে আবারও একটি চড় কষালো ফটকা। এবার পড়ে গেল জোনাকী। ছিটকে পড়ল বাচ্চাদুটিও ওর শক্ত বাঁধন ছিড়ে। কাঁদতে থাকলো উচ্চ স্বরে। কোনো শব্দ করলো না জোনাকী। থুথু ফেললো। থুথুর সাথে বেরিয়ে আসা রক্ত দেখে আঁতকেও উঠলো। পুনরায় প্রহার করতে উদ্যত হতেই এবার একটি শব্দে থেমে গেল ফটকা।
‘ফটকা, বাড়ী আছিস, ফটকা---।’ডাকটি শুনতে পেল। রক্তবর্ণ চক্ষু মেলে জোনাকীর দিকে তাকানো অবস্থায়ই লুঙ্গির কাছা ভালো করে গিট দিলো। প্রকৃত বিষয়টি ভদ্রলোককে বলেই টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হলো ফটকা। আর তার সামনেই দাঁড়িয়ে রইলো হা করে।
‘সর্বনাশ! বলিস কি। এখন ঢাকায় যাবো কীভাবে? রুদ্ধভঙ্গিতে ভদ্রলোক শাসাতে থাকলেন ফটকাকে। দুটো টিকেটের জন্য পাঁচশ টাকা দিতে চাইলাম। এখন কীভাবে ঢাকা যাব!’ তোদের উপর ভরসা করে থাকলেই শালা পস্তাতে হয়। দাত কড়মড় করে বলতে থাকলেন ভদ্রলোক। অতঃপর খিস্তি করতে করতেই হন হন করে চলে গেলেন কোট-টাই পরিহিত টিকেট প্রত্যাশী ভদ্রলোক। পড়ে রইলো জোনাকী, জোনাকীর সন্তান আর দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে অমানবিক হয়ে আসা জোনাকীর ভালোবাসার মানুষটি।